প্রচ্ছদ » সম্পাদকীয় » বিস্তারিত
সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ শিশু নিহত
দায় এড়াতে উদ্যোগ জরুরি
২০১৪ ফেব্রুয়ারি ১৭ ০০:২৭:০৩একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা সফরের বাস উল্টে রাস্তার পাশে পুকুরে পড়ায় ৭ শিশুর করুণ মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে আরও প্রায় ৪০ জন। বাসটি বেনাপোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের নিয়ে গিয়েছিল মেহেরপুরের মুজিবনগরে। সারা দিনের আনন্দ উৎসব শেষে একরাশ ক্লান্তি নিয়ে শিক্ষার্থীরা যখন নিরাপদ আশ্রয় বাড়ি ফেরার পথে তখনই ঘটে যায় এক অভাবনীয় বিপর্যয়। হঠাৎ রাস্তা থেকে ছিটকে বাসটি পড়ে যায় একটি পুকুরের মধ্যে। ফলে এক সাথে এত শিশুর অকাল মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটে।
এই দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে তাৎক্ষণিক জানা যায়, গ্রামের লোকেরা সবজির বীজ সংগ্রহের সহজ উপায় হিসেবে রাস্তার উপর ডাঁটা বিছিয়ে রেখেছিল। এই বীজ ও সবজির পাতায় সামান্য বৃষ্টির পানি পাওয়ায় রাস্তাটি হয়ে পড়ে পিচ্ছিল। যে কারণে দ্রুতগতির বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এই দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে দু’টি উপাদান বিশেষভাবে দায়ী। একটি, পাকা রাস্তার উপরে ফসলের ‘বতর’ নেওয়া, অন্যটি রাস্তার পাশে পুকুর বা জলাশয় থাকা।
রাস্তার উপর বতর নেওয়ার কারণে হরহামেশা বিপত্তি ঘটে থাকে। এ ছাড়া এর কারণে ছোটখাটো অনেক দুর্ঘটনাও ঘটে। কিন্তু এটি বন্ধ করা যে জরুরি তা কখনও কেউ আমলে নেয় না। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি আমাদের দেখিয়ে দিল রাস্তাকে অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করলে তা কত ভয়াবহ পরিণতির কারণ হতে পারে।
দুর্ঘটনাটির অন্য কারণ হলো রাস্তার পাশের একটি জলাশয়। বাসটি তার মধ্যে পড়ে না গেলে হয়ত এতগুলো শিশুর করুণ মৃত্যু ঘটত না। শুধু এ ক্ষেত্রেই নয়, রাস্তার পাশের ডোবা, নালা, খাদ বা অন্য কোনো জলাশয় আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা বৃদ্ধি করে। কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির অন্যতম কারণ এটি।
রাস্তা নির্মাণে সতর্কতা ও পরিকল্পনা থাকলে এই বিপত্তি থেকে সহজেই রক্ষা পাওয়া যেত। অর্থাৎ রাস্তার পাশে অপরিকল্পিতভাবে মাটি না কেটে পরিকল্পিতভাবে জলাশয় তৈরি করে মাটি সংগ্রহ করা যেত। মোঘল শাসকরা যেমনটি করতেন। এতে রাস্তার জন্য মাটির যেমন অভাব হতো না তেমনি সৃষ্ট জলাশয়গুলো অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও জনকল্যাণে লাগত।
এই নির্মম দুর্ঘটনায় যে শিশুরা হারিয়ে গেল তাদের জন্য আমাদের কিছু করার ছিল না। কিন্তু তাদের মৃত্যুর জন্য যে কারণগুলো দায়ী বলে চিহ্নিত হলো তা যদি দূর করার ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তাহলে সেটাই হবে তাদের প্রতি আমাদের দায় পালন। এই দায় পালন করলে ভবিষ্যতে এমন মর্মান্তিক ঘটনা এড়ানও সম্ভব হবে।
আমরা আশা করি, এই দুর্ঘটনার পর গৃহস্থালির কাজে পাকা রাস্তা ব্যবহার না করার জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধি পাবে আর সরকারের দায়িত্বশীল মহল পরিকল্পিত রাস্তা নির্মাণে উদ্যোগী হবেন।