প্রচ্ছদ » » বিস্তারিত

জীবন বাঁচাতে পুলিশ ব্লাড ব্যাংক

২০১৭ ফেব্রুয়ারি ২২ ২১:২৭:২২
জীবন বাঁচাতে পুলিশ ব্লাড ব্যাংক

‘পুলিশ মানেই চিরচেনা ইউনিফর্ম, সাথে থাকবে অস্ত্র। এমনটা ভেবে এবং দেখেই অভ্যস্ত আমরা। বইমেলায় এসে যখন “পুলিশ ব্লাড ব্যাংক” নামাংকিত স্টল দেখলাম, কৌতুহলভরে ঢুকে পড়লাম এখানে। সত্যিই খুব আশ্চার্যান্বিত হলাম এর আদ্যপান্ত শুনে।’ বইমেলায় এসে বলছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ ডিপার্টমেন্টের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী তানভীর রহমান।

‘পুলিশের এমন জনসেবামূলক উদ্যোগের সাথে শামিল হতে তাই জীবনে প্রথমবারের মত রক্ত দিলাম!’ চোখে মুখে প্রসন্নতার ছাপ নিয়ে বলে যাচ্ছিলেন তানভীর।

পুলিশ ব্লাড ব্যাংকে রক্ত দিতে আসা সাধারণ লোকজনের প্রায় সবারই ছিল এমন অনুভূতি। অবশ্য যেসব পুলিশ সদস্যরা রক্ত দিচ্ছেন তারা পুলিশের সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়টাকেই তুলে ধরলেন।

সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে ‘রক্তে মোরা বাঁধন গড়ি, রক্ত দেব জীবন ভরি’- এ শ্লোগানকে সামনে রেখে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ২০১০ সালের ১২ই ডিসেম্বর চালু করে ‘পুলিশ ব্লাড ব্যাংক’ এর কার্যক্রম। ডিএমপি’র ঐ সময়কার পুলিশ কমিশনার জনাব এ কে এম শহীদুল হক বিপিএম, পিপিএম (বর্তমানে সম্মানিত ইন্সপেক্টর জেনারেল) এর ব্যক্তিগত সদিচ্ছায় এবং ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় শুরু হওয়া এ ব্যাংকে এ পর্যন্ত হাজার হাজার ব্যাগ রক্ত সংগৃহীত হয়েছে।

এ কয়েক বছরে কোন ফি ছাড়াই অসংখ্য মানুষের ব্লাড গ্রুপিং করা হয়েছে । এ ব্যাংকের কার্যক্রমের সাথে শুরুতেই ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন ডিএমপির তৎকালীন উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর দপ্তর ও প্রশাসন) হাবিবুর রহমান বিপিএম(বার), পিপিএম যিনি বর্তমানে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের অতিরিক্ত ডিআইজি (সংস্থাপন) হিসেবে কর্মরত।

এ ব্যাংকে শুধু যে পুলিশ সদস্যরা রক্ত দিচ্ছে তা কিন্তু নয়। ব্লাড ব্যাংক কার্যক্রমের সাথে জড়িত পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা গেল, সকল স্তরের সাধারণ মানুষ বিশেষ করে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা রক্তদান করছে এ ব্যাংকে।

কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল, রাজারবাগের ২য় তলায় স্থাপিত কার্যালয় থেকে পরিচালিত হচ্ছে ‘পুলিশ ব্লাড ব্যাংক’ যেখানে ফ্রিজিং ব্যবস্থা যথাযথ থাকায় রক্তের গুনগতমান অক্ষুন্ন থাকে।

ডিএমপি পুলিশ কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া বিপিএম(বার), পিপিএম ব্লাড ব্যাংকটির সার্বিক তত্ত্বাবধান করছেন এবং প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। এটি পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর দপ্তর ও প্রশাসন) মহাঃ আশরাফুজ্জামান বিপিএম এর অধীনে থাকা পুলিশ সদস্যরা নিরলসভাবে কাজ করছেন মুমূর্ষুদের জন্য অতীব জরুরী রক্ত সরবরাহ করতে।

২০১১ সালে এ ব্যাংক আউটডোর ক্যাম্পিং কার্যক্রম শুরু করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ব্লাড ক্যাম্প পরিচালনা করে আসছে। প্রতিটি ক্যাম্পিং এ গড়ে ৫০-৬০ ব্যাগ রক্ত সংগৃহীত হয়েছে এবং ৪০০-৫০০ জন ব্যক্তির ব্লাড গ্রুপিং করা হয়েছে কোন প্রকার ফি ছাড়াই । আরও উল্লেখযোগ্য হল এ ধরনের ক্যাম্পিং হয়েছে ঢাকেশ্বরী মন্দির এবং বনানী পূজামন্ডপে যেখানে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে।

বইমেলা, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলাসহ বিভিন্ন ইভেন্টে এ ধরনের ব্লাড ব্যাংক ক্যাম্পিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। ২০১৭ সালের এবারের বইমেলায় ২১ শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৫২০ ব্যাগ রক্ত সংগৃহীত হয়েছে এবং ১০০০ এর অধিক ব্যক্তির ব্লাড গ্রুপিং করা হয়েছে ।

পুলিশ ব্লাড ব্যাংকে সংগৃহীত রক্ত পুলিশ, জনগন নির্বিশেষে সবাইকে সরবরাহ করা হয়। প্রতিনিয়তই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতাল প্রয়োজনীয় রক্তের জন্য পুলিশ ব্লাড ব্যাংকে যোগাযোগ করে রক্ত সংগ্রহ করেছে।

যারা পুলিশ ব্লাড ব্যাংকে রক্তদান করে তাদেরকে রেজিষ্ট্রেশন নম্বরসহ ব্লাড ব্যাংকের ডোনার কার্ড প্রদান করা হয়। মজুদ থাকা সাপেক্ষে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ডোনার কার্ডধারী এবং তার আত্মীয় পরিজনরা প্রয়োজনীয় রক্ত সংগ্রহ করতে পারেন।

এছাড়া এই ব্যাংকে রক্তদান করলে HIV(এইডস), HCB, HBSAg, সিফিলিস, ম্যালেরিয়া এ ৬টি রোগের ফ্রি টেষ্ট করতে পারেন রক্তদাতা।

মেডিকেল সাইন্সের বরাতে জানা যায়, রক্ত কোষের সর্বোচ্চ আয়ুষ্কাল ১২০দিন। সুতরাং মানবদেহে অস্থিমজ্জা থেকে সৃষ্ট রক্ত ৩ মাসের মধ্যে স্বাভাবিক নিয়মেই তার জীবনকাল হারায়। শুধু শুধু নষ্ট না করে তাই আসুন না- আমরা সকলেই রক্তদান করি যেটা দিতে পারে কোন মুমূর্ষু রোগীকে নতুন জীবন।

আমাদের দেশে সাধারনত ৪ মাসের বিরতিতে রক্ত প্রদান করার নিয়ম প্রচলিত আছে। যাদের জরুরী ভিত্তিতে রক্তের প্রয়োজন এবং যারা পুলিশ ব্লাড ব্যাংকে রক্ত দিতে চান (১৮ থেকে ৫৫ বছর বয়সী) তাদেরকে নিম্নোক্ত ঠিকানায় যোগাযোগের অনুরোধ জানাচ্ছি-

পুলিশ ব্লাড ব্যাংক কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল
২য় তলা রাজারবাগ, ঢাকা-১০০০।
ফোনঃ ৯৩৬২৫৭৩, ০১৭১৩৩৯৩৮৬
E-mail: info@policebloodbank.gov.com.bd
Web: www.policebloodbank.gov.bd
লেখক—
সুব্রত দাস
সাব-ইন্সপেক্টর
মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগ
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, ঢাকা।