প্রচ্ছদ » সম্পাদকীয় » বিস্তারিত
কার স্বার্থে এই কালক্ষেপণ
২০১৪ ফেব্রুয়ারি ২৪ ০০:২১:২২দ্য রিপোর্টের একটি বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ গার্মেন্টস কারখানায় শ্রমিকদের জন্য ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি কাঠামো তিন মাস পার হলেও বাস্তবায়ন হয়নি। বড় কারখানাগুলোতে ঘোষিত মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন করা হলেও ক্ষুদ্র ও মাঝারি ধরনের কারখানাতে বাস্তবায়ন করার কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘোষিত মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন না হওয়া কারখানাগুলোর মধ্যে ৫০ শতাংশ কারখানায় গ্রেডিং সমস্যা এখনও বিদ্যমান, ৩০ শতাংশে ন্যূনতম মজুরিই দেওয়া হয়নি।
প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতির বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত মাত্র ২০ শতাংশ গার্মেন্টস কারখানায় ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। বাকি কারখানাগুলোয় ঘোষিত মজুরি কাঠামো বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগও নেওয়া হয়নি। ফলে এ সব কারখানার শ্রমিকদের মাঝে চাপা ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। বিজিএমইএ সভাপতিও ঘোষিত মজুরি কাঠামো সব কারখানায় বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি বলে স্বীকার করেছেন। তবে কি পরিমাণ কারখানায় বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে সেটা তিনি জানাতে পারেননি।
যে শ্রমিকদের শ্রম-ঘামের বিনিময়ে গার্মেন্টস কারখানা আজ শিল্প হিসেবে স্থান করে নিয়েছে সেই শ্রমিকরা এখনও উপেক্ষিত, যা দুর্ভাগ্যজনক। শ্রমিকদের আন্দোলনের পর গত বছর সরকার-মালিক-শ্রমিক পক্ষ আলোচনা করে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়, যা গত ডিসেম্বরের মধ্যে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ৮০ ভাগ কারখানায় এখনও পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে- আদৌ শ্রমিকরা তাদের সেই ঘোষিত মজুরি পাবেন কিনা।
যে লাখ লাখ শ্রমিক তাদের শ্রম দিয়ে বিদেশের বাজার থেকে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা এনে সরকার এবং মালিকদের পুষ্ট করছেন তাদের জীবন-জীবিকার দিকে না তাকানো মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য যে ন্যূনতম মজুরি কাঠামো ঘোষণা করা হয়েছে তা জীবনযাত্রার ব্যয় হিসেবে মোটেও পর্যাপ্ত নয়। তারপরও শ্রমিকরা ওই মজুরি কাঠামো মেনে নিয়ে শিল্প বাঁচাতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। সেই শ্রমিকদের বঞ্চিত রেখে নিজেদের মোটেও সভ্য সমাজের বাসিন্দা দাবি করা যায় না।
অন্যদিকে, এমনিতেই বাংলাদেশ গার্মেন্টস শিল্প নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে আসামির কাঠগড়ায়। এমন পরিস্থিতিতে এই শিল্পে শ্রমিক অসন্তোষ জিইয়ে রাখা শুভবুদ্ধির পরিচয় নয়। এটাকে পুঁজি করে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগী মহল যদি ‘ষড়যন্ত্র’ আঁটে তাহলে এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে। তেমনটি ঘটলে এই শিল্প ধ্বংসের দায় সরকার ও মালিক পক্ষ এড়াতে পারবে না।