প্রচ্ছদ » রাজনীতি » বিস্তারিত

শুধু আসন সমঝোতাই নয়, জয়ের নিশ্চয়তাও চায় শরীকরা

২০২৩ ডিসেম্বর ০৮ ০৯:২৪:০৮
শুধু আসন সমঝোতাই নয়, জয়ের নিশ্চয়তাও চায় শরীকরা

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক:দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া দলগুলো বিশেষ করে জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলীয় জোট সঙ্গীরা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শুধু আসন সমঝোতাই নয়, জিতে আসার নিশ্চয়তাও চায়। বিজয় নিশ্চিত করতে সমঝোতার আসনগুলো থেকে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীকেও বসিয়ে দেওয়ার কথা বলছে তারা।

এদিকে আসন সমঝোতার পাশাপাশি সংসদের বর্তমান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি সরকারেও থাকতে চায়। এ বিষয়গুলো নিয়ে বিভিন্নভাবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনা ও দরকষাকষি চলছে বলে জানা গেছে।

আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে বর্তমানে জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। এ নির্বাচন নির্ধারিত সময় অনুষ্ঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টিকে প্রধান সহযোগী শক্তি হিসেবে দেখছে আওয়ামী লীগ। এ কারণে দলটির সঙ্গে আসন সংযোগটা নিয়ে আওয়ামী লীগ অনেকটাই অস্বস্তিতে রয়েছে।

কারণ কিছু আসনে জাতীয় পার্টির বিজয় নিশ্চিত করা না হলে দলটি নির্বাচনে থাকবে কিনা তা নিয়েও নানা গুঞ্জন রয়েছে। এ বিষয়টিও আওয়ামী লীগকে ভাবতে হচ্ছে। আবার জাতীয় পার্টি যে পরিমাণ আসন দাবি করছে সেটাও ছাড়তে আওয়ামী লীগ রাজি নয় এবং আওয়ামী লীগের জন্য সেটা কঠিন বলে দলটির একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে।

গত নির্বাচনেও জাতীয় পাটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের আসন সমঝোতা হয় এবং আওয়ামী লীগ সমঝোতার আসনগুলোতে দলীয় প্রার্থী দেয়নি। এ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ২২টি আসনে বিজয়ী হয়েছিল। এবার জাতীয় পার্টি ৩০টি আসনে ছাড় চায় বলে জানা গেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ এ ২০টির নিচে রাখতে চায়।

এদিকে বর্তমান সংসদে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির নির্বাচিত সংসদ সদস্য রয়েছেন তিন জন। ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে ওয়ার্কার্স পার্টি নৌকা এবং নিজস্ব প্রতীক হাতুড়ি মার্কা নিয়ে নির্বাচন করে ছয়টি আসনে বিজয়ী হয়েছিল। এবারে নির্বাচনে তারা ১০টি আসনের দাবি জানিয়েছে বলে জানা গেছে। তবে দলটি মূলত অতীতের সেই ছয়টি আসন নিশ্চিত করতে চায় এবং আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ছাড় চায়।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের (ইনু) বর্তমান সংসদে আসন রয়েছে তিনটি। জাসদও ১০টি আসনের দাবি জানিয়েছে। তবে এ দলটিও ছয়টি আসন নিশ্চিত করতে চায় বলে জানা গেছে। এ বিষয়গুলো নিয়েই আওয়ামী লীগের সঙ্গে দল দুটির আলোচনা চলছে। তবে আওয়ামী লীগ কোনোভাবেই এ সংখ্যক আসন ছাড়তে সম্মত নয়। বিষয়টি দল দুটির নেতারাও উপলব্ধি করছেন। এ দল দুটি যে সংখ্যক আসন দাবি করছে আওয়ামী লীগ ছাড়ের ক্ষেত্রে এ সংখ্যা অর্ধেকের নিচে নামিয়ে আনতে চায় বলেও জানা গেছে। ১৪ দলের অন্য শরিকদেরও কয়েকটি করে আসনে দাবি রয়েছে। তবে ওই দলগুলো নিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদের মতো সমস্যা হবে না বলে আওয়ামী লীগ মনে করছে।

আবার এই দলগুলো শুধু আসন সমঝোতা নয় জিতে আসার নিশ্চয়তাও পেতে চাচ্ছে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে। এক্ষেত্রে যে দলগুলো নিজস্ব মার্কায় নির্বাচন করবে তাদের সঙ্গে যেখানে যেখানে সমঝোতা হবে সেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী যেমন প্রত্যাহার চায় পাশাপাশি আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী যারা আছে তাদের কাছ থেকেও বড় ধরনের প্রতিদ্বন্দিতার মুখোমুখি হতে যাতে না হয় সে নিশ্চয়তা চায়। আবার যে দলগুলো সমঝোতার আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচন করবে তারাও দলটির স্বতন্ত্র প্রার্থীর মুখোমুখি হতে চায় না। এ ধরনের পরিস্থিতিতে যাতে পড়তে না হয় সে নিশ্চয়তা তারা চায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, এ ধরনের বিশাল চাহিদা ও সংকট নিয়ে আওয়ামী লীগ জোট সঙ্গী ও নির্বাচনের সহযোগীদের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি অনেক ক্ষেত্রে জটিল হয়ে উঠেছে।

এদিকে অতীতের মতো আগামীতেও জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে সরকারের থাকতে চায়। ২০০৯ ও ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিসভায় জাতীয় পার্টির কয়েকজনকে মন্ত্রী করা হয়। প্রথম মন্ত্রিসভায় একজন, দ্বিতীয় মন্ত্রিসভায় তিন জন এবং নির্বাচনকালীন সরকারের কয়েক জনকে মন্ত্রী করা হয়েছিল। এবারের নির্বাচনে পর সরকারে থাকার নিশ্চয়তা চাচ্ছে দলটি। এ বিষয়গুলো নিয়েও দলটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্নভাবে কথাবার্তা চলছে বলে জানা গেছে।

আর এ নিশ্চয়তা তারা না পেলে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবে কি না সে বিষয়টিও আওয়ামী লীগকে ভাবতে হচ্ছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যেও জাতীয় পার্টির দাবি ও অবস্থানের একটা ইঙ্গিত পাওয়া যায়। বৃহস্পতিবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বৈঠক সম্পর্কে তিনি বলেন, বৈঠকে আসন বণ্টনের প্রসঙ্গ আসেনি, আলোচনা হয়েছে নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে নির্বাচনমুখী দলগুলোর সমন্বয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে নাশকতা-গুপ্ত হামলার মতো নির্বাচনবিরোধী অপকর্ম প্রতিহত করা নিয়ে। রাজনৈতিক আলোচনাই ছিল মুখ্য।