প্রচ্ছদ » বিশেষ সংবাদ » বিস্তারিত
অনুমোদন পাওয়া বেক্সিমকোর বন্ড নিয়ে চলছে আলোচনা- সমালোচনা
২০২৪ এপ্রিল ০৯ ১২:১৪:৫২দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: সম্প্রতি দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি বেক্সিমকো লিমিটেডের ২ হাজার ৬২৫ কোটি টাকার বন্ডের অনুমোদন দিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। গত সপ্তাহে বিএসইসির কমিশন সভা শেষে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এমন তথ্য জানানো হয়।
বিএসইসি জানায়, বেক্সিমকো অরূপান্তরযোগ্য জিরো কুপন বন্ড ছেড়ে আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি সংগ্রহ করবে। এ বন্ড বিক্রি করা হবে প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিশ্রেণির উচ্চ সম্পদশালীদের কাছে। এ বন্ডের প্রতি লটের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। বন্ডের মাধ্যমে সংগ্রহ করা অর্থ ব্যাংকঋণ পরিশোধের পাশাপাশি গাজীপুরের শ্রীপুরে একটি আবাসন প্রকল্পে বিনিয়োগ করবে। এর আগে ১০ মার্চ বেক্সিমকোর পরিচালনা পর্ষদের সভায় প্রথমবারের মতো জিরো কুপন বন্ড ইস্যুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কোম্পানিটির পর্ষদ সভার সিদ্ধান্তের এক মাসের মধ্যেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি এ বন্ডের অনুমোদন দেয়। বিএসইসি জানিয়েছে, এ বন্ডের কোনো অংশ শেয়ারে রূপান্তরিত হবে না। বন্ডটি শেয়ারবাজারে লেনদেনও করা যাবে না। এই বন্ডের ডিসকাউন্ট বার্ষিক ১৫ শতাংশ।
বেক্সিমকোর এই বন্ডের অনুমোদনের পর থেকে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের মতামত জানাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। বিশ্লেষকরা বলছেন এটা যে ধরনের বন্ড এই বন্ডে ঝুঁকির পরিমান অনেক বেশি। কেও কেও কথা বলছেন বেক্সিমকোর এই বন্ড থেকে যেহেতু পাওয়া যাবে না বিনিয়োগকারীদের ফায়দা কম।
সম্প্রতি সজীব হাসান নামে এক ব্যক্তির বেক্সিমকোর বন্ড অনুমোদন নিয়ে একটি পোস্ট ভাইরাল হয়। পোস্ট টি ছিলো এমন,
“বেক্সিমকো লিমিটেড ২০২১ নভেম্বর মাসে ৩০০০ কোটি টাকা মার্কেট থেকে উঠাইয়া নিছে Sukuk বন্ড দিয়ে। ২৬০০ কোটি টাকার নতুন বন্ড- Unsecured Non-convertible, Redeemable Zero Coupon Bond -নিয়ে আসছে এখন;
১. Unsecured মানে এই বন্ড এর against এ specific কোনো collateral সম্পদ নাই
২. Non-convertible- এই বন্ড শেয়ার এ convert হবে না
৩. Redeemable -মানে এই বন্ড বেক্সিমকো গ্রুপ চাইলেই মেয়াদের আগে মার্কেট থেকে কিনে নিতে পারবে ; যেমন interest rate যদি কখনো ১২% থেকে ৮% এ নেমে আসে , তাহলে বেক্সিমকো কোম্পানি আপনার বন্ড আপনার কাছ থেকে ফেরত নিয়ে নিতে পারবে। আপনাকে তখন ৮% রেট এ reinvestment করতে হবে
৪. Zero Coupon- এই বন্ড আপনাকে কোনো interest দিবে না ; ১০০ টাকার বন্ড আপনি ১৫% কম দামে কিনবেন , মেয়াদ শেষে আপনার কাছ থেকে ফেস ভ্যালু তে কোম্পানি কিনে নিবে।
Unsecured Non-convertible, Redeemable এই ৩তা বৈশিষ্টই বিনিয়োগকারীর risk অনেক বাড়িয়ে দেয়।
এই Bond এর টাকার একটা অংশ দিয়ে কোম্পানি তার ব্যাংক লোন পরিশোধ করবে ; এই কোম্পানি existing লোন এর ইন্টারেস্ট ১২%-১৩% . ১৫% রেট এ টাকা উঠাইয়া ১২% রেট এর লোন সে পরিশোধ করবে? এই বন্ড এর টাকার আরেকটা অংশ দিয়ে একটা Project Development এ ঋণ দিবে ; ১৫% রেট এ টাকা উঠাইয়া যদি কেউ ঋণ দেয় তাহলে Processing cost ৩% সহ সেই ঋণের interest হওয়া উচিত minimum 18%. যেখানে ব্যাংক থেকেই ১৩%-১৪% এ ঋণ পাওয়া যাচ্ছে , সেখানে ১৮% রেটে ঋণ নিয়ে প্রকল্প করার কি logic ?
আরেকটা কথা - যেইখানে আমাদের মার্কেট এ ১০০ কোটি টাকার ফোর্স sale হলে মার্কেট ৭০-৮০ points পরে যা, সেখানে ২৬০০ কোটি টাকা স্বেচ্ছায়ই কে দিবে? প্রসঙ্গত ২০২১ নভেম্বর মাসে ৩০০০ কোটি টাকা মার্কেট থেকে উত্তোলন করেছিল , সেই সময় index ছিলো ৭০০০+. সেই টাকা মার্কেট থেকে যাবার পর মার্কেট downward ট্রেন্ড এ চলে যায়, যেইটা এখনো অব্যহত আছে।“
এই পোস্টটি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বেশ আলোচনার বিষয়বস্তু ছিলো। ওই পোস্টে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্ট ও ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহোযোগী অধ্যাপক আল আমিন লিখেন, “ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা কষ্টের টাকা নিয়ে আসবে পূজিবাজারে, প্রতিষ্ঠান কারসাজি করে সেই টাকা হাতাবে,হাতানো টাকা থেকে একটা অংশ কাফফারা হিসাবে দিয়ে একটা গ্রুপের বন্ড কিনবে। পাটা-পোতায় ঘষাঘষি মরিচের সর্বনাশ।“ আতিকুর রহমান নামে আরেক ব্যক্তি লিখেছেন” ব্যাংকগুলাকে এখন জোর করে এসব বন্ড কিনাবে। তারা তারপর এই ইনভেস্টমেন্টকে মার্কেট ইনভেস্টমেন্ট হিসাবে দেখায়ে শেয়ারের এক্সপোজার কমায়ে ফেলবে। Moreover, এই ২৭০০ কোটি টাকা ক্যাপিটাল মার্কেট থেকে মানি মার্কেটে চলে যাবে তারপর কোথায় যাবে আল্লাহ জানে।“ এস এম জাহিদ নামে একজন লিখেছেন, “ ১৯৯৬ --- ২০১০ ---- ২০২৪ আরেকটা কালবৈশাখী সন্নিকটে!”
প্রসঙ্গত, বেক্সিমকোর পক্ষ থেকে ইতিপূর্বে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের জানানো হয়েছিল, বন্ডের মাধ্যমে সংগ্রহ করা অর্থের একটি অংশ খরচ করা হবে শ্রীপুর টাউনশিপ কোম্পানির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে করা ‘মায়ানগর’ আবাসন প্রকল্পে। প্রকল্পটি নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের পাশে প্রায় ১০০ একর জায়গায় অবস্থিত। এই প্রকল্পে ১৮ হাজার অ্যাপার্টমেন্ট থাকবে। এ ছাড়া স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, বিনোদন, খেলাধুলাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় নাগরিক সুবিধার পাশাপাশি থাকবে ৫০ লাখ বর্গফুটের বাণিজ্যিক জায়গা। যেখানে সার্ভিসড অ্যাপার্টমেন্ট, হোটেল, অফিস, কনভেনশন সেন্টার ও শপিং মল করার পরিকল্পনা রয়েছে কোম্পানিটির।
(দ্য রিপোর্ট/ মাহা/ ৯ এপ্রিল দুইহাজার চব্বিশ)