প্রচ্ছদ » বিশেষ সংবাদ » বিস্তারিত

আয় বহির্ভূত সম্পদ ও তথ্য গোপণ

 

যুবলীগ নেতা সারোয়ার বাবুর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

২০২৪ মে ০৮ ১৮:১৭:০০
যুবলীগ নেতা সারোয়ার বাবুর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

দ্য রি‌পোর্ট প্রতিবেদক: যুবলীগ নেতা গাজী সারোয়ার হোসেন বাবুর বিরুদ্ধে তদন্তের পর মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদক উপ-সহকারী পরিচালক খোকন চন্দ্র মোহন্ত তদন্ত শেষে এই মামলা করেছেন।

দুদক তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, অভিযুক্ত গাজী সারোয়ার হোসেন বাবুকে গত ২০২০ সালের ২৪ নভেম্বর তার নামে স্থাবর-অস্থাপন সকল সম্পত্তির হিসাব জমা দিতে বলে দুদক। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ২৩ ডিসেম্বর তিনি তার দুদকের সম্পদ বিবরণী জমা দেন।

দুদক নথি পর্যালোচনা করে দেখে যে, অভিযুক্ত গাজী সারোয়ার ২৫ লক্ষ ৫২ হাজার ৫২৪ টাকার সম্পদ, বিবরণীতে গোপণ করেছেন এবং এক কোটি ৪৭ লাখ ৩২ হাজার ৫৯৮ টাকার আয় বহির্ভূত সম্পদ পাওয়া গিয়েছে। আয় বহির্ভূত সম্পদ ভোগ দখলে রাখা দুদক আইনে ২০০৪ এর ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তদন্ত কর্মকর্তা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, ওই সময় (২০২০ সাল) তদন্ত করেন সাবেক উপসহকারী পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম। তিনি অভিযুক্ত গাজী বাবুর বিরুদ্ধে সম্পদ বিবরণীতে তথ্য গোপন ওআয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের জন্য অনুসন্ধান প্রতিবেদনে মামলার সুপারিশ করেন। পরে মামলাটি উপসহকারী পরিচালক খোকন চন্দ্র মোহন্তের কাছে হস্তান্তর করা হয়। অনুসন্ধানে সকল নথিপত্র দেখে অভিযুক্ত গাজী বাবুর বিরুদ্ধে দুদক মামলার অনুমোদন দেয়।
নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, অভিযুক্তের স্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ এক কোটি ৮৯ লাখ ৬৬ হাজার টাকা এবং অস্থাবর এক লাখ ৮৮ হাজার ৪৭৬.৭২ টাকা, মোট স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ এক কোটি ৯১ লাখ ৫৪ হাজার ৪৭৭ টাকা। কিন্তু অনুসন্ধানে তার নামে ২ কোটি ৪ লাখ ৬৬ হাজার স্থাবর সম্পত্তি এবং ১২ লাখ ৪১ হাজার এক টাকা অস্থাবর সম্পত্তিসহ মোট ২ কোটি ১৭ লাখ ৭ হাজার এক টাকার সম্পত্তির তথ্য পাওয়া যায়। এর থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, তিনি ২৫ লাখ ৫২ হাজার ৫২৪ টাকার পরিমান সম্পত্তির তথ্য গোপন করেছেন।

তার সম্পদ বিবরণীতে তিনি উল্লেখ করেন পুরান ঢাকার গ্রেট ওয়াল শপিং সেন্টারে ৪১৫, ৪২৪, ৪৩৬, ৪৩৯ ও ৪৪০ মোট ৩৪০০ ফুট দোকানের পজিশন ৫০ লাখ টাকায় কিনেছেন। এই তথ্য যাচাইয়ের জন্য গ্রেট ওয়াল ফাউন্ডেশন লিমিটেড কর্তৃপক্ষের কাছে যোগাযোগ করা হলে তারা জানায় গাজী সারোয়ারের নামে ১৬ টি দোকানের মালিকানার রয়েছে যা তিনি তৃতীয় পক্ষ থেকে কিনেছেন। এজন্য এই ডকুমেন্টগুলো কর্তৃপক্ষের কাছে নেই। গ্রেট ওয়াল ফাউন্ডেশন লিমিটেড জানায়, ১৬ টি দোকান ছাড়াও এই একই শপিং মলে গত ২০১৭ সালের ২৭ মে আন্ডারগ্রাউন্ডের ১৬ নাম্বার দোকানের পজিশনের মালিকানা রয়েছে তার। ১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে কিনেছেন এই দোকানের পজিশন।
এক্ষেত্রে দেখা যায় যে, অভিযুক্ত দোকানের পজিশনের ১৫ লাখ টাকার তথ্য দুদকে জমা দেওয়া সম্পদ বিবরণীতে গোপন করেছেন। এছাড়া অভিযুক্ত বিবরণীতে ব্যবসার পুঁজি হিসেবে কোন টাকা প্রদর্শন করেন নাই। তার ব্যবসার পুঁজি হিসেবে দশ লাখ ৩২ হাজার ৫২৪ টাকা দেখানো হয়েছে, যা তিনি সম্পদ বিবরণীতে গোপন করেছেন। সম্পদ বিবরণীতে ১৫ লাখ টাকার এবং ১০ লাখ ৩২ হাজার ৫২৪ টাকাসহ মোট ২৫ লাখ ৩২ হাজার ৫২৪ টাকা সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন।

প্রসঙ্গত, অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা গাজী সারোয়ার হোসেন বাবু ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্রসংসদ সাবেক ভিপি ও কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এক সময় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাবেক সভাপতি ক্যাসিনো কাণ্ডে আলোচিত ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের 'ডানহাত' (ঘনিষ্ট সহযোগী) ছিলেন গাজী সারোয়ার হোসেন বাবু। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পুরান ঢাকার গ্রেট ওয়াল শপিং সেন্টারের দোকানদারদের থেকে এবং ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে চাঁদাবাজি করে অবৈধ অর্থ উপার্জন করেছেন তিনি। দলীয় প্রভাব অপব্যবহারের জন্য তার বিরুদ্ধে দাড়িয়ে কেউ টিকে থাকতে পারেন নাই। কিন্তু ক্যাসিনো কাণ্ডে যুবলীগের সাবেক নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট জেলে যাওয়ার পর থেকে গাজী সারোয়ার হোসেন বাবুর প্রভাব স্থানীয়ভাবে কমতে থাকে। এখন তিনি পুরান ঢাকায় না আসলেও তার বড়ভাই হাজী স্বপন তার জায়গায় প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করছেন। স্থানীয়ভাবে সারোয়ার হোসেন বাবুর সাথে যারা কাজ করতেন তারা এখন হাজী স্বপনের সাথে কাজ করেন। তার অবর্তমানে হাজী স্বপন স্থানীয় সবকিছু পরিচালনা করেন। তাদের স্থায়ী ঠিকানা সূত্রাপুরের ৪ নম্বর হেমেন্দ্র দাস রোডের বাড়িটির জমির কিছু অংশ অবৈধভাবে দখলের অভিযোগ রয়েছে। তবে স্থানীয় প্রভাবের কারণে কেউ প্রতিবাদ করতে পারেননি।

দুদকের তদন্ত প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ্য করা হয়, অভিযুক্তের কাছে ২ কোটি ১৭ লাখ ৭ হাজার এক টাকার তথ্য পাওয়ার পাশাপাশি তার ওপর পাঁচ লাখ টাকার দায় রয়েছে। দায় বাদ দিলে নিট সম্পত্তির পরিমাণ ২ কোটি ১২ লাখ ৭ হাজার এক টাকা। এই সময়ে পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয় ৫২ লাখ ৫৮ হাজার ৬২ টাকা। সুতরাং ব্যয়সহ অর্জিত সম্পদের মূল্য মোট ২ কোটি ৬৪ লাখ ৬৫ হাজার ৬৩ টাকা। কিন্তু তার গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায় এক কোটি ১৭ লাখ ৩২ হাজার ৪৬৫ টাকা। তাই গ্রহণযোগ্য আয়ের চেয়ে এক কোটি ৪৭ লাখ ৩২ হাজার৫৯৮ টাকার সম্পদ বেশি পাওয়া যায়, যা তার আয় বহির্ভূত। দুদকের সম্পদ বিবরণীতে ২৫ লাখ ৩২ হাজার ৫২৪ টাকা সম্পদের তথ্য গোপনের মাধ্যমে মিথ্যা বিবরণী এবং ঠিকাদারি ব্যবসার আড়ালে বিভিন্ন দুর্নীতিমূলক কর্মকাণ্ডে তার আয়ের উৎসের সাথে অসংগতিপূর্ণভাবে এক কোটি ৪৭ লাখ ৩২ হাজার ৫৯৮ টাকা মূল্যের সম্পদ রাখা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই তদন্তে সকল অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় অভিযুক্ত গাজী সারোয়ার হোসেন বাবুর বিরুদ্ধে দুদক আইনে মামলার সুপারিশ করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা এবং এরই পরিপ্রেক্ষিতে দুদক মামলার অনুমোদন দিয়েছে। পরবর্তী সময়ে তদন্তে অন্য কারো সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে বলে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ্য করেন।

এ বিষয়ে কথা বলতেযুবলীগ নেতা গাজী সারোয়ার হোসেন বাবুর মুঠোফোনে একাঢিকবার চেষ্টা করে হলেও নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

(দ্য রি‌পোর্ট/এসআর/‌মে ০৮, ২০২৪)