প্রচ্ছদ » সম্পাদকীয় » বিস্তারিত
আমরা এই পুলিশ দিয়ে কি করব?
২০২৪ সেপ্টেম্বর ০৮ ০৯:১৮:৫৩ফরাজী আব্দুল্লাহ:পুলিশ জনগণের বন্ধু! এ কথাটি চরম সত্য! কিন্তু সেই পুলিশ যখন জনগণের সাথে চরম মাত্রায় নিষ্ঠুরতম আচরণ করে তখন তাকে কি বলা যায়? আমার মনে হয় শত্রু বললেও ভুল হবে। কারণ, একজন শত্রু কি পারে তার প্রাণের দুশমন এর সাথে এমন নিষ্ঠুরতার পরিচয় দিতে, যা সাম্প্রতিক সময়ের গণঅভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে ছাত্র-জনতার সাথে করেছে পুলিশ। এ কি ভাষায় প্রকাশ করার মত?
রংপুরের আবু সাঈদ বা ঢাকার মুগ্ধকে খুব কাছ থেকে সরাসরি গুলি করে হত্যা করার দৃশ্য আমরা সবাই দেখেছি। কিন্তু, ঢাকাসহ সারা দেশে একযোগে ইন্টারনেট বন্ধ করে, মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করে রাতের আঁধারে ও দিনের আলোতে পুলিশ যে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে তা আমরা সবাই দেখেছি। এমনকি সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে ইন্টারনেট বন্ধ থাকা অবস্থায় পুলিশ যেসব ধ্বংসযোগ্য ও হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে তার সচিত্র প্রতিবেদন আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি। এ ধরনের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের কোন নজির বাংলাদেশের ইতিহাসে আছে? আমরা কি এমন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম?
আচ্ছা আমার একটা সন্তান আছে। যত অন্যায়ই সে করুক আমি কি পারব তাকে সবার সামনে গুলি করতে? সেই সন্তানকে গুলি করে মারার পর আবার তার লাশ চালের বস্তার মত চ্যাংদোলা করে ভ্যানের ওপর জড় করতে। তারপর সেই লাশ আবার আগুনে পুড়িয়ে দিতে। যার মধ্যে ন্যূনতম মানবতা আছে তাকে দিয়ে এ কাজ করা সম্ভব নয়। হিতাহিত জ্ঞান শূন্য মানুষ কি এটা করতে পারে?
আমরা ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান এর সময় পুলিশের এমন নিষ্ঠুর ও নৃশংস কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করেছি। উক্ত সময়ে সারাদেশে ইন্টারনেট বন্ধ থাকলেও এখন মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে আমরা পুলিশের সেসব নৃশংস হত্যাকাণ্ড এর ভিডিও ফুটেজ আমরা পাচ্ছি। আমরা দেখতে পাচ্ছি আশুলিয়া, যাত্রাবাড়ী, রামপুরা, বাড্ডা, উত্তরা, মোহাম্মদপুর, চাংখারপুলসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশের চালানো গণহত্যা। যে যাই বলুক ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানকে ঘিরে ঘটে যাওয়া নারকীয় এই হত্যাকান্ডের দায় পুলিশ কিছুতেই এড়াতে পারে না। এই হত্যাকান্ডের জন্য সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। যারা তাদেরকে হুকুম দিয়েছে, যারা উদ্বুদ্ধ করেছে সেই সব সিনিয়র কর্মকর্তাদেরকেও বিচারের আওতায় আনতে হবে। যারা রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য পুলিশ বাহিনীকে ব্যবহার করেছে তাদেরকেও বিচার করতে হবে।
৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী সরকারের পতন হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেদিন ভারতে পালিয়ে গেছেন। বর্তমানে অন্তরবর্তীকালীন সরকারের হাতে চলছে দেশ। সুতরাং এখন সময় এসেছে পুলিশকে ঢেলে সাজানোর। পুলিশ বাহিনীতে সংস্কার করতে হবে এখনই। পুলিশ যাতে জনগণের বন্ধুর পরিবর্তে শত্রুতে পরিণত না হয় সে পদক্ষেপ এখনই নিতে হবে। যেসকল পুলিশ সদস্য জুলাই-আগস্টের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিল তাদেরকে চাকরিচ্যুত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। শুধুমাত্র বদলী করে এ সংস্কার হবে না। পুলিশ বাহিনীর আপাদমস্তক অর্থাৎ কন্সটেবল থেকে শুরু করে মহাপরিদর্শক পর্যন্ত সংস্কার করতে হবে। সংস্কার হতে হবে স্বচ্ছ ও অর্থবহ। তাহলে হয়তো বা এই বাহিনীর ওপর মানুষের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে। উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুসারে সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে পুলিশে কনস্টেবল থেকে আইজিপি পর্যন্ত ২ লাখ ১২ হাজার ৭২৪ জন সদস্য রয়েছে (বর্তমানে এ সংখ্যা কম বা বেশি হতে পারে)।
পুলিশের একটি গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে। উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, বাংলাদেশ পুলিশের ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল সময় হল ১৯৭১ সাল। মহান মুক্তিযুদ্ধে একজন ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল, বেশ কয়েকজন এসপিসহ প্রায় সকল পর্যায়ের পুলিশ সদস্য বাঙ্গালীর মুক্তির সংগ্রামে জীবনদান করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে ১,২৬২ জন শহীদ পুলিশ সদস্যের তালিকা স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিল পত্রে উল্লেখ পাওয়া যায়।
শান্তি, শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা ও প্রগতি এই চার মূল মন্ত্র অনুযায়ী পরিচালিত হয় বাংলাদেশ পুলিশ। বিগত আওয়ামী লীগের শাসনামলে সাড়ে ১৫ বছরে পুলিশ এ মূল মন্ত্র থেকে অনেক দূরে চলে গিয়েছে। তাই সংস্কারের মাধ্যমে এই বাহিনীকে আবার আগের যায়গায় ফিরিয়ে আনতে হবে। পুলিশ তার হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাবে। পুলিশই হবে জনগণের প্রকৃত বন্ধু।