প্রচ্ছদ » অর্থ ও বাণিজ্য » বিস্তারিত

‘কৃষি ধ্বংস করে বড় বড় কোম্পানি কাজ করছে"<

২০২৪ নভেম্বর ১৩ ০৯:২০:২৩


‘কৃষি ধ্বংস করে বড় বড় কোম্পানি কাজ করছে

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক:চুক্তিভিত্তিক কৃষি উৎপাদন বা কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ে কৃষকের স্বাধীন সত্তা থাকবে না বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, কৃষি ধ্বংস করে বড় বড় কোম্পানি কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি বলছেন, “কন্ট্রাক্ট ফার্ম কৃষকের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। এতে কৃষকরা কতটুকু উপকার পাচ্ছে, তা আমাদের দেখতে হবে।”

মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশের কৃষি শ্রমিক: সংকট ও সমাধান’ শিরোনামে গোলটেবিল আলোচনায় দেওয়া বক্তব্যে ফরিদা আখতার বিষয়টি তুলে ধরেন।

রিসার্চ ইনিশিয়েটিভস বাংলাদেশ-রিইব এবং জার্মানির রোসা লাক্সেমবার্গ স্টিফ্টুং-আরএলএস এর যৌথ উদ্যোগে এই আলোচনার আয়োজন করা হয়।

কৃষি শ্রমিকদের জন্য ন্যায্য মজুরি এবং সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে নীতিগত সংস্কারের তাগিদ দিয়ে উপদেষ্টা ফরিদা বলেন, “শ্রমিকদের বেঁচে থাকা শুধু মজুরির সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়।”

এই উপদেষ্টা বলেন, “কৃষক ফসলের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না, আবার চালের দাম বাড়লে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়; সেক্ষেত্রে অনেক সময় খাদ্যদ্রব্য আমদানি করতে হয়।”

“কৃষকদের ভর্তুকি দিয়ে ভালো দামে খাদ্যদ্রব্য সংগ্রহ করলে আর আমদানি করতে হবে না কিন্তু তা আমরা করছি না,” বলেন তিনি।

২০২৩ সালের জুনে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা-এফএও এর আন্তর্জাতিক কৃষিব্যবস্থায় নারীর ভূমিকা নিয়ে ‘স্ট্যাটাস অব উইমেন ইন অ্যাগ্রিকালচার সিস্টেম-২০২৩’ শিরোনামে প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিশ্বের কৃষিপ্রধান দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে কৃষিতে নারীর অংশগ্রহণ সবচেয়ে দ্রুত বাড়ছে।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, বৈশ্বিক গড় হারের চেয়ে এখন বেশি নারী বাংলাদেশের কৃষি খাতে জড়িত। তবে মোবাইল ফোন সেবা, ইন্টারনেট প্রযুক্তি থেকে শুরু করে জমির মালিকানায় তারা এখনও বৈষম্যের শিকার হলেও সীমিত সুযোগ কাজে লাগিয়ে তারা কৃষিতে অনেক বড় অবদান রেখে চলেছেন।

এফএও এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের কৃষিতে ২০০৫ সালে নারীর ভূমিকা ছিল ৩৬ দশমিক ২ শতাংশ, যা ২০১৯ সালে এসে ৯ দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে ৪৫ দশমিক ৩ শতাংশে দাঁড়ায়। কৃষিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ার হারের বিবেচনায় বিশ্বে এটিই সর্বোচ্চ ছিল।

বৈশ্বিকভাবে কৃষিতে নারীর ভূমিকা প্রায় ৪০ শতাংশ; বাংলাদেশে এই হার বৈশ্বিক গড় হারের চেয়ে ৫ শতাংশ বেশি, বলা হয় ওই প্রতিবেদনে।

কৃষিতে নারীরা বিরাট অবদান রেখে গেলেও তা নানা কারণে ঝুঁকিতে রয়েছে বলে ফরিদা আখতারের বক্তব্যে উঠে এসেছে।

তিনি বলেছেন, “তামাক চাষ দেশে নীল চাষের মতো গড়ে উঠছে। বাধ্য হয়ে বহু কৃষক খাদ্যশস্য বাদ দিয়ে তামাক চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ছে, যা অত্যন্ত ভয়ানক।

“তামাক চাষে নারী শ্রমিকদের জীবনের ঝুঁকি বেশি, অনেক ক্ষেত্রে এ পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত গর্ভবতী নারী শ্রমিকদের সন্তান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।”

‘পরিকল্পিতভাবে’ কৃষিতে জিডিপি গুরুত্ব হারাচ্ছে বলে মনে করেন এই উপদেষ্টা। তিনি বলছেন, “বিষয়টি আমাদের ভেবে দেখা দরকার। উন্নত হওয়া মানে কৃষির গুরুত্ব জিডিপিতে কমে গিয়ে অন্য খাতে বাড়বে এমনটি নয়। এ বিষয়ে আরও গুরুত্ব দিতে হবে।”

কৃষিতে সবুজ বিপ্লব ‘ধূসর বিপ্লবে’ পরিণত হয়েছে মন্তব্য করে ফরিদা আখতার বলেন, “এই খাতে সার-কীটনাশক ব্যবহারের ফলে ক্যান্সারসহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগ কীটনাশক ব্যবহারের ফলে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ বিষয়ে সবাইকে আরও সচেতন হতে হবে।”

গোলটেলিব আলোচনায় অংশ নেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল লতিফ, রিইব পরিচালনা পর্ষদ সদস্য অধ্যাপক এম এম আকাশ।

অধ্যাপক আকাশ বলেন, “কৃষি শ্রমিকদের অবদান অপরিসীম এবং তাদের প্রতি আরও গুরুত্ব দেওয়া উচিত।”

রিইব এর নির্বাহী পরিচালক মেঘনা গুহঠাকুরতা তার বক্তব্যে বলেন, “কৃষি শ্রমিকদের স্বীকৃতি প্রদান এবং তাদের অধিকার নিশ্চিত করা আমাদের প্রধান লক্ষ্য।”

রোসা লাক্সেমবার্গ স্টিফ্টুং-এর সাউথ এশিয়া প্রজেক্ট ম্যানেজার মিস্টার ভিনোদ কষ্টি বলেন, “বাংলাদেশের কৃষি শ্রমিক, বিশেষত মহিলাদের, ন্যায্য মজুরি, সামাজিক সুরক্ষা এবং সমান সুযোগ প্রদানের জন্য নীতিগত পরিবর্তন অপরিহার্য। আমরা এই সংলাপের মাধ্যমে প্রান্তিক কণ্ঠস্বরকে শক্তিশালী করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছি।”

রিইব এর পরিচালক সুরাইয়া বেগম বলেন, “কৃষি শ্রমিকদের শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হলেও তাদের নির্ধারিত কর্মঘণ্টা এবং ন্যূনতম মজুরি নেই, যা উদ্বেগের বিষয়।”

আলোচনার প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম খান, যিনি বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে কৃষি শ্রমিকদের চ্যালেঞ্জ এবং তাদের উন্নয়নের সম্ভাবনা তুলে ধরেন।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, “স্বাধীনতার পর থেকে কৃষি খাতে বিভিন্ন পরিবর্তন এসেছে, এনজিও কার্যক্রম, ক্ষুদ্রঋণ এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়েছে। তবে কৃষি শ্রমিকদের সমস্যাগুলি এখনও সমাধানযোগ্য নয়। এসব নিয়ে কাজ করার সময় এখন এসেছে।”

কৃষি শ্রমিক প্রতিনিধি মোহাম্মদ মিঠু সাকিদার (বগুড়া) এবং রিনা মুন্ডা (সাতক্ষীরা) তাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন এবং কৃষি শ্রমিকদের প্রতিদিনের চ্যালেঞ্জ এবং চাহিদার কথা তুলে ধরেন।

আলোচক সানজিদা সুলতানা (কর্মজীবী নারী), আনোয়ার হোসেন রেজা (বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতি), কৃষিবিদ আমিনুল ইসলাম বাবু (সেফ ফুড এলায়েন্স) এবং সাইদুল ইসলাম (আইএলও) বক্তব্য দেন।

দেশের কৃষি শ্রমিকদের মজুরির অসামঞ্জস্যতা, সামাজিক সুরক্ষা এবং ন্যায্য অধিকার নিয়ে আলোচনা করেন তারা।