প্রচ্ছদ » জাতীয় » বিস্তারিত

সিভিল সার্ভিসে বিশৃঙ্খলার শঙ্কা, কলমবিরতি-মানববন্ধন-সমাবেশের ঘোষণা

২০২৪ ডিসেম্বর ২২ ১০:১১:১৯
সিভিল সার্ভিসে বিশৃঙ্খলার শঙ্কা, কলমবিরতি-মানববন্ধন-সমাবেশের ঘোষণা

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক:পদোন্নতি কোটা কমানো এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে ক্যাডার থেকে আলাদা কমিশনে রূপ দেওয়ার ঘোষণায় সিভিল প্রশাসনের ক্যাডারদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ঘোষণায় প্রশাসন ক্যাডারসহ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য এবং অন্যান্য ২৫ ক্যাডার শেষমেষ কর্মসূচিতে যাচ্ছে।

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গত ১৭ ডিসেম্বর সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সচিবালয় বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও সংস্কার কমিশনের সদস্যসচিব মো. মোখলেস উর রহমান শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে ‘ক্যাডার’ থেকে বের করার সুপারিশ করবে বলে জানান। এছাড়াও উপসচিব পদে পরীক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন ও প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৭৫ শতাংশের বদলে ৫০ শতাংশ কর্মকর্তা নিয়োগের সুপারিশের ঘোষণা দেওয়া হয়।

কমিশনের এই ঘোষণার পর থেকেই সুপারিশ প্রত্যাহারের জন্য বিবৃতি প্রদান করছে প্রশাসন ক্যাডারসহ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য এবং অন্যান্য ২৫ ক্যাডার। কিন্তু কমিশনের কোনো সাড়া না পেয়ে ২৫ ক্যাডার কলমবিরতিসহ মানববন্ধন, বিভাগী সমাবেশ এবং কেন্দ্রীয় সমাবেশে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণার ডাক দিয়েছে।

শনিবার (২১ ডিসেম্বর) 'আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ' এর সাথে পরিষদের অন্তর্ভুক্ত ২৫টি ক্যাডারের নেতৃবৃন্দের একটি মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেগুনবাগিচায় পূর্ত ভবনে এই সভায় পরিষদের সমন্বয়ক ড. মুহম্মদ মফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় ২৫টি ক্যাডারের সভাপতি-সেক্রেটারিসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন উপসচিব পুলে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ কোটা রেখে অন্যান্য ২৫টি ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারকে সিভিল সার্ভিস থেকে আলাদা করার সুপারিশের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ২৫টি ক্যাডার নিয়ে গঠিত 'আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ' এর সাথে কোনো রকম আলোচনা ছাড়া এমন সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়।

সভায় বক্তারা বলেন, নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে গঠিত সংস্কার কমিশনসমূহের মধ্যে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সরকারের সকল নীতি নির্ধারণ করে এবং বাস্তবায়নে নেতৃত্ব প্রদান করে সিভিল প্রশাসন; যা বর্তমানে ২৬টি ক্যাডার নিয়ে গঠিত। যেখানে কার্যকর রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়তে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের আমূল পরিবর্তন দরকার, সেখানে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন বৈষম্যমূলকভাবে উপসিচব পুলে একটি ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ কোটা সুপারিশের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে মিডিয়ার সামনে উপস্থাপন করায় সিভিল সার্ভিসের অন্য ২৫টি ক্যাডারের সকল সদস্যের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

আলোচনায় বক্তারা বলেন, কমিশনের এ সকল সিদ্ধান্তের সুযোগ নিয়ে একটি গ্রুপ ইতোমধ্যে বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর ও উদ্দেশ্যমূলক তথ্য প্রচার শুরু করেছে। সিনিয়র সার্ভিস পুল (বা উপসচিব পুল) এর পদসমূহ কোনো নির্দিষ্ট ক্যাডারের নয়। সার্ভিস অ্যাক্ট-১৯৭৫ অনুযায়ী মেধার ভিত্তিতে এ সকল পদে নিয়োগের কথা থাকলেও বিভিন্ন অজুহাতে কোটা পদ্ধতি চালু রেখেছে প্রশাসন ক্যাডার। এছাড়া ২০১৮ এর নির্বাচনের পর সার্ভিস অ্যাক্ট-১৯৭৫ রহিত করে ২০২৪ এর নির্বাচনের পর এ সকল পদ নিজেদের তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করেছে প্রশাসন ক্যাডার, যা মেধাভিত্তিক জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রগঠনে মারাত্মক অন্তরায়।

সিভিল সার্ভিসের কার্যকর সেবা নিশ্চিত করতে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ থেকে পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার দাবি করা হয়েছে অর্থাৎ প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে স্ব-স্ব ক্যাডারের অভিজ্ঞ ও দক্ষ কর্মকর্তারা পদায়িত হবেন। বর্তমানে প্রতিটি সেক্টরে নীতি নির্ধারণ, পরিকল্পনা প্রণয়ন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছেন প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যরা যারা সেই সেক্টর সম্পর্কে অনভিজ্ঞ ও অদক্ষ। ফলে সেক্টরগুলো কাঙ্ক্ষিত জনসেবা নিশ্চিত করতে পারছে না। তাছাড়া সকল সেক্টরে একটি ক্যাডারের নিয়ন্ত্রণ থাকায় সৃষ্ট আমলাতান্ত্রিক সিন্ডিকেট, অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি ও বৈষম্য রাষ্ট্রের সকল সেক্টরকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেছে। দেশের মানুষ প্রকৃত জনসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। জনবান্ধব সরকারের পরিবর্তে দেশে বিভিন্ন সময়ে গড়ে উঠেছে জনবিচ্ছিন্ন স্বৈরাচারী সরকার।

এক বিবৃতিতে বলা হয়, কমিশন শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারকে সিভিল সার্ভিস হতে আলাদা করতে চাওয়া জনমনে নতুন সন্দেহের উদ্রেক করেছে। কমিশনের এ সকল সিদ্ধান্ত সিভিল সার্ভিসের মধ্যে চরম বিশৃংখলা সৃষ্টি করতে পারে। বৈষম্যহীন জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠনে প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট ক্যাডারের কর্মকর্তার দ্বারা পরিচালনা এবং কোটামুক্ত মেধাভিত্তিক উপসচিব পুল অত্যন্ত জরুরি বলে জোর দাবি করেন বক্তারা।

এছাড়া সম্প্রতি জনপ্রশাসন সচিব মিডিয়ার সামনে প্রশাসন ক্যাডারের বঞ্চিত সদস্যদের ভূতাপেক্ষভাবে গ্রেড-১ প্রদানের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন, যার মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত ও মৃত সদস্যও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অথচ অন্যান্য ক্যাডারকে গ্রেড-৪ বা গ্রেড-৩ এর মধ্যে তারা আটকে রেখেছেন তারা।

আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সমন্বয়ক ড. মুহম্মদ মফিজুর রহমান এক বিবৃতিতে জানান, উদ্ভুত এমন পরিস্থিতিতে সর্বসম্মতিক্রমে কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সিদ্ধান্তগুলো হলো- সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) প্রতিটি ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উদ্ভূত পরিস্থিতি বিষয়ে বিবৃতি প্রদান করবে। মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এক ঘন্টা সব অফিসে কলমবিরতি পালন করা হবে। বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সকল অফিসে স্ব-স্ব কর্মস্থলের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচী পালিত হবে। যে সকল বিভাগে বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়নি, অতি দ্রুত সেখানে সমাবেশ আয়োজন এবং জনসম্পৃক্ততা আরো বৃদ্ধি করা হবে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আগামী ৪ জানুয়ারি শনিবার ঢাকায় সমাবেশ আয়োজন করা হবে এবং পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।