প্রচ্ছদ » বিশ্ব » বিস্তারিত
পাঁচ আফ্রিকান প্রেসিডেন্টকে অপমান করলেন ট্রাম্প
২০২৫ জুলাই ১৪ ০৯:৫৭:২৪
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি আফ্রিকার কোনো কোনো শীর্ষ নেতার সঙ্গে সাক্ষাতে মার্কিন অস্ত্রশস্ত্র কিনতে তাঁদের উৎসাহ দিয়েছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট গত ৯ জুলাই তিনদিনের এক সম্মেলন করেছেন আফ্রিকার কয়েকটি দেশের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের নিয়ে। হোয়াইট হাউজে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন গ্যাবন, গিনি বিসাও, মৌরিতানিয়া, লাইবেরিয়া ও সেনেগালের নেতারা। বৈঠকটি এই অতিথিদের জন্য অবজ্ঞা প্রকাশের পরিকল্পিত বৈঠকের রূপ নেয়।
আল জাজিরার বরাত দিয়ে পার্স টুডে জানিয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প তার লেনদেনের নীতির অংশ হিসেবে মার্কিন অস্ত্রের নতুন নতুন ক্রেতা খুঁজছেন। আর এবার তিনি আফ্রিকা নিয়ে জুয়া খেলা শুরু করেছেন। আর এক্ষেত্রে এই পাঁচ আফ্রিকান প্রেসিডেন্ট উপনিবেশবাদের সেবকের মতই অনুগত ভূমিকা রেখেছেন। তাঁরা ট্রাম্পের ক্রোধ ও অতিরিক্ত শুল্ক বা কর ঠেকাতে গিয়ে নিজে নিজে জাতির সম্মানকে পদদলন করেছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট তার এই বৈঠক শুরু করেন ৪ মিনিটের একটি ভাষণ দিয়ে। এই ভাষণে তিনি আমন্ত্রিত পাঁচ অতিথিকে গোটা আফ্রিকার প্রতিনিধি বলে দাবি করেন। আফ্রিকা ও আমেরিকার বাণিজ্যে এই দেশগুলোর হিস্যা খুব কম হলেও তা তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এই দেশগুলোর মাটির নিচে থাকা তেল, সোনা ও অন্যান্য খনিজ সম্পদ। এরপর ট্রাম্প ঘোষণা করেন যে তার দেশ অর্থনৈতিক সহায়তা থেকে বাণিজ্যের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আর এই সময়ই এই বৈঠকের আসল উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয়েছে! ট্রাম্প কূটনীতিকের মুখোশ ছেড়ে নাটকের অভিনেতায় পরিণত হন। তিনি মেহমানদের জন্য আন্তরিক মেজবান নন। ফলে ওই বৈঠক এক লজ্জাজনক নাটকের রূপ নেয়।
পুতুল নাচের দক্ষ পরিচালকের মতোই ডোনাল্ড ট্রাম্প তার আফ্রিকান মেহমানদের বিশেষ অভিনয় দেখাতে বাধ্য করেন। সংবাদ মাধ্যমের জন্য কিছু বলতে তিনি তাঁদের অনুরোধ জানান।
পুতুল নাচের এ পর্যায়ে সবার আগে এগিয়ে আসেন মৌরিতানিয়ার প্রেসিডেন্ট ওয়ালেদ গাজওয়ানি। তিনি ট্রাম্পকে 'বিশ্বের সবচেয়ে বড় শান্তি সংঘটক' বলে দাবি করেন যে কিনা ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ থামিয়েছেন! অথচ তিনি গাজায় ইহুদীবাদী ইসরাইলের নৃশংস গণহত্যার প্রতি মার্কিন ট্রাম্প সরকারের সামরিক ও কূটনৈতিক সমর্থনের দিকে ইঙ্গিত করেননি। অন্যদিকে আফ্রিকান ইউনিয়ন এই গণহত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
গাজওয়ানি মৌরিতানিয়ার খনিজ সম্পদ আহরণ করতে ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান।
এরপর এগিয়ে আসেন সেনেগালের প্রেসিডেন্ট বি ডি ফাই । তিনি তাঁর দেশে গল্ফ খেলার একটি মাঠ বানিয়ে দিতে ট্রাম্পের প্রতি অনুরোধ জানান। কিন্তু ট্রাম্প এই অনুরোধ রক্ষা করেননি। তিনি ফাই এর বাহ্যিক যুব অবস্থার প্রশংসা করেন। ফাই ছিলেন এমন এক ব্যক্তি যিনি উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে ক্ষমতায় আসেন। তিনি নব্য উপনিবেশবাদীদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার এবং আফ্রিকার মর্যাদা পুনরুদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি হোয়াইট হাউসে সবচেয়ে নির্লজ্জ উপনিবেশবাদের সামনে মাথা নত করেন এবং ট্রাম্পের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে ব্যর্থ হন। তিনি সমমর্যাদার দাবি তুলতেও ব্যর্থ হন। ব্যর্থ হন জাতীয় সার্বভৌমত্বের প্রতি সমর্থন জানাতেও যার প্রতি দেশটির জনগণ তীব্র সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে গ্যাবনের প্রেসিডেন্ট এ্যঙ্গুমা মার্কিন সরকারের সঙ্গে বিজয়-বিজয় শরিকানার কথা বলেন।
ওদিকে লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট জোসেফ বুঅকাই সম্পর্কে ট্রাম্প যে মন্তব্য করেন তা হল, আপনি কোথায় এমন সুন্দর ইংরেজি শিখেছেন? কোথায় পড়াশোনা করেছেন? কোথায়? লাইবেরিয়ায়? বুঅকাই ইংরেজিতে এমন দক্ষ হওয়ায় ট্রাম্প বিস্মিত হয়েছেন, উপনিবেশবাদীদের চরিত্রটাই এমন! দীর্ঘকাল ধরে তারা এই চরিত্র লালন করেছে। যেসব আফ্রিকান উপনিবেশবাদীদের ভাষায় দক্ষ উপনিবেশবাদীরা তাদেরকে কয়েকটি জটিল ভাষায় দক্ষ বুদ্ধিজীবী হিসেবে দেখেনি বরং তাঁদেরকে অধীনস্থ হিসেবেই দেখে যারা কর্তৃত্বকামিতার সংস্কৃতিতে আকৃষ্ট। তারা জ্ঞান বা সচেতনতার জন্য পুরস্কার পায় না বরং তা পায় শ্বেতাঙ্গদের প্রতি ঘনিষ্ঠ হওয়ার কারণে। ট্রাম্প এই পাঁচজন আফ্রিকান প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন যারা নিজে নিজে দেশের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখেন। সমান অংশীদারিত্বের প্রতি ট্রাম্পের আগ্রহ ছিল না। তার দরকার ছিল একটি নাটক। আর ওই পাঁচ ব্যক্তি তার এই চাহিদা পূরণ করেছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে মুহূর্তে আফ্রিকার এই নেতারা উপনিবেশবাদী কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার এক ঐতিহাসিক সুযোগ পেয়েছিলেন সে সময়েই তারা মাথা নত করলেন। খ্রিস্টীয় ষোড়শ শতকের পশ্চিমা কর্তৃত্ব পুনরুজ্জীবনের যে স্বপ্ন ট্রাম্প দেখছেন তারা ট্রাম্পকে সে সুযোগই বাস্তবায়নে সহায়তা করলেন। আর এর বিনিময়ে কিছু পুরস্কার পেলেন। ট্রাম্প বলেছেন, তিনি হয়তো এই দেশগুলোর উপর নতুন কর আরোপ করবেন না! কারণ তারা এখন আমার বন্ধু!